কোরিয়ানরা প্রথম পরিচয়েই আপনার রক্তের গ্রুপ জানতে চায় কেন?

ধরুন, আপনি দক্ষিণ কোরিয়ায় একজন নতুন বন্ধুর সাথে দেখা করলেন। গল্পের মাঝে হঠাৎ সে আপনাকে প্রশ্ন করলো, "তোমার ব্লাড টাইপ কী?"

আপনি কিছুটা হতবাক, এমন প্রশ্ন তো সাধারণত ডাক্তাররা করে! কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ায় এটি একেবারেই সাধারণ, যেন আপনার জন্মদিন জিজ্ঞাসা করছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন?

এই প্রশ্নের পেছনে আছে এক মজার কিন্তু জনপ্রিয় বিশ্বাস, যা দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষজন অনেক দিন ধরে মেনে চলছে।

রক্তের গ্রুপ দিয়ে কীভাবে বিচার করা হয় ব্যক্তিত্ব?

দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রচলিত একটি ধারণা হলো, একজন মানুষের রক্তের গ্রুপ তার চরিত্র, মেজাজ, ভালোবাসা, কাজের ধরন এমনকি সম্পর্কের ধরনও নির্ধারণ করে।

এই ধারণার উৎপত্তি জাপানে ১৯২০ সালের দিকে, যেখানে একজন প্রফেসর রক্তের গ্রুপের ভিত্তিতে মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ করেন। পরে ১৯৭০-এর দশকে দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম ও পপ কালচারের মাধ্যমে এটি সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, চারটি রক্তের গ্রুপ অনুযায়ী মানুষের বৈশিষ্ট্য এমন:

টাইপ A:

  • গম্ভীর, ধৈর্যশীল, দায়িত্ববান
  • খুব বেশি সংবেদনশীল
  • সংগঠিত এবং নিয়মপ্রিয়
  • নেতিবাচক দিক: লাজুক, উদ্বিগ্ন, নিজের ভাবনা প্রকাশে কুণ্ঠিত

টাইপ B:

  • স্বাধীনচেতা, সৃজনশীল, খোলা মনস্ক
  • সাধারণ নিয়মে চলতে পছন্দ করে না
  • আবেগপ্রবণ ও কখনো কখনো একগুঁয়ে
  • নেতিবাচক দিক: আত্মকেন্দ্রিক এবং ‘প্লেবয়’ ইমেজ

টাইপ AB:

  • রহস্যময়, দ্বৈত প্রকৃতির
  • কখনো খুব সংবেদনশীল, কখনো খুব ঠান্ডা মাথার
  • মিশ্র চরিত্র বলে অনেকের কাছে বিভ্রান্তিকর
  • নেতিবাচক দিক: অন্যদের জন্য পড়তে কঠিন

টাইপ O:

  • আত্মবিশ্বাসী, নেতৃত্বপ্রিয়, সামাজিক
  • সহজে বন্ধুত্ব করতে পারে
  • বিপদের সময় উদার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসে
  • নেতিবাচক দিক: আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, কখনো অহংকারী

বাস্তব জীবনে এই বিশ্বাসের প্রভাব কতটা?

১. ডেটিং এবং সম্পর্ক:

কোরিয়ান ডেটিং অ্যাপ বা ম্যাচমেকিং সার্ভিসগুলোতে প্রোফাইলে রক্তের গ্রুপ লেখা বাধ্যতামূলক।
অনেকে বিশ্বাস করেন, টাইপ A এবং টাইপ O-এর মধ্যে ভাল মিল হয়, তবে টাইপ B-কে সম্পর্কের দিক থেকে অনেকে এড়িয়ে চলেন।

২. বন্ধুত্ব ও সামাজিক সম্পর্ক:

নতুন কারো সাথে পরিচয় হওয়ার পরই রক্তের গ্রুপ জিজ্ঞেস করা হয় এটা বোঝার জন্য যে, “তুমি আমার সাথে ভালোভাবে মিশতে পারবে কি না।”

৩. চাকরি এবং কর্পোরেট কালচার:

বিশেষ কিছু কোম্পানিতে (যদিও বর্তমানে বিরল) রক্তের গ্রুপকে মানসিক স্থিতি বোঝার জন্য ব্যবহারের নজির আছে।

৪. টিভি শো এবং K-pop সংস্কৃতি:

প্রতিটি K-pop তারকার প্রোফাইলে রক্তের গ্রুপ থাকে। ভক্তরা এটা নিয়ে মিম, গসিপ এমনকি ম্যাচিং পর্যন্ত করেন।

কিন্তু, এর কি কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমান আছে?

বিজ্ঞানীদের মতে, এই ধারণার পেছনে কোনও শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা WHO, কোনো সংস্থা এমন সম্পর্ককে সমর্থন করে না। তবে এটি এমন একটি ‘কালচারাল ট্রেন্ড’ যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে চলে আসছে।

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, এটি একধরনের “confirmation bias” - অর্থাৎ, আপনি যা বিশ্বাস করেন সেটাকেই বাস্তবে দেখতে চান।

শেষ কথা

রক্তের গ্রুপ দিয়ে বিচার করা হয়ত বৈজ্ঞানিক নয়, কিন্তু এটি কোরিয়ানদের সংস্কৃতির একটি মজার ও চমকপ্রদ দিক।
যখন তারা আপনাকে এই প্রশ্ন করেন, সেটা মূলত তারা আপনাকে আরও ভালোভাবে জানতে চায় বলেই।

তাই যদি কখনো কেউ জিজ্ঞাসা করে, “তোমার ব্লাড টাইপ কী?” তখন ভাববেন না এটা একটা অদ্ভুত প্রশ্ন, বরং বলুন হাসিমুখে, “O Positive! আর তুমি?”

Comments